Recent News
সাবেক প্রেসিডন্ট জিয়াউর রহমানের কবর কোথায়

মুক্তিযুদ্ধ ৭১ নিউজ

প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল গফ্ফার:

মৃত্যু পরবর্তীতে কারো কবর নিয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপন খবই দু:খজনক। বাংলাদেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির কবর নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের নিশ্চয় কারন আছে। জিয়া চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নিহত হন, তার হত্যাকারীরা রাঙ্গুনিয়ার কাপ্তাই সড়কের পাশে নিহতদের কবরস্ত করেছিল। জিয়ার বিশ্বস্থ সেনারাই আবার আডাই দিন পর কার্পেটে মোরানো গলিত লাশ কবর থেকে উঠিয়ে ঢাকা পাঠিয়ে ছিল। তাইত প্রশ্ন জিয়ার কবর কোথায়?

এ বিতর্কের অনেক গুলো কারনের মধ্যে ১। হত্যান্ডের পরথেকে রাঙ্গুনিয়া কবরস্ত করা, আডাইদিন পর কবর থেকে উঠিয়ে ঢাকা পাঠানো এবং সংসদ এলাকায় পুনরায় কবরস্ত করা পর্যন্ত জিয়ার লাশ কেউ কি সনাক্ত করেছিলেন? ২। কোথাও কি পোষ্টমার্টম করা হয়েছিল? ৩। স্ত্রী, সন্তান ও আত্নীয় স্বজনদের লাশ (মুখ) দেখতে দেওয়া হলো না কেন? ৪। জিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার ও চিটার বিভাগীয় তদন্ত, তার সরকার বা তার দলীয় সরকার করে নাই কেন? এছাড়াও আরো অনেক অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হতেই পারে।

জিয়ার কবর নিয়ে উত্থাপিত বিতর্কের অবসান ঘটানোর দ্বায়ীত্ব ছিল তার দল ও পরিবারের, গত চল্লিশ বছরেও তারা করননি। জিয়া হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি নিজেই ছিলেন রাষ্ট্রপতি ও তার দল রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। তার দলীয় সরকারই তাকে কবরস্থ করেছিল। যারা জিয়াকে হত্যা করেছিল তারা মাত্র দেড়দিন চট্টগ্রামের কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রন নিয়েছিল।

হত্যাকারীরা রাঙ্গুনিয়ার কাপ্তাই সড়কের পাশে দুটি কবরে পাঁচটি লাশ (কথিত) কবরস্ত করেছিল, যাহার আডাই দিন পর গলিত ও দু:গন্ধময় লাশ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা। কি উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা কেউই দেখিনি। পছা গলিত বিধঘোটে দু:র্গন্ধময় পরিবেশে অনবরত স্প্রে ছিটানোর মাঝে কতোজন সিপাহি কবর খডাখুরীর মাঝে হঠাৎ করে এক মেজর চিৎকার দিয়ে উঠলেন পাওয়া গেছে পাওয়া গেছে। সবাইকে অস্ত্র দেখিয়ে ও বাঁশী বাজিয়ে অনেক দুরে সডিয়ে দিয়ে কার্পেট পেছানো কিছু একটা পিকাপে উঠিয়ে চট্টগ্রামের দিকে দ্রুত গতিতে চলে গেল।
আমাদের জুনিয়র হাবলু (পুরা নাম মনে নাই) নামের ছাত্র মুখে গামছা বেঁধে কবরের খুব কাছাকাছি বার বার যাওয়ার চেষ্টা করছিল। দুর্গন্ধ ও সেনাদের বাধার কারনে কাছে ভিতরে পারে নাই তবে কার্পেটে মোরানো লাশ পিকাপে উঠানোর সাথে সাথে সেও পিকাপে উঠতে গিয়ে গায়ে ও পায়ে ব্যাথা পেয়ে ছিল।

রাঙ্গুনিয়ার কাপ্তাই সড়কের পাশের কবর থেকে লাশ উঠানোর সময় আমি সহ বেশ কয়জন ছাত্র (চট্টগ্রাম ইন্জিনিয়ারিং কলেজ) ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্ষী সাক্ষী। আমরা তখন চুয়েট তৎকালীন চট্টগ্রাম ইন্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। কাপ্তাই সড়কটিই আমাদের বৈকীলীন হাঁটা চলা ও দৌড়া দৌড়ীর একমাত্র অবলম্বন। ৩০শে মে ১৯৮১ সকাল বেলা হত্যাকাণ্ডের সংবাদে বিভ্রান্তিতে পরে যাই। কিছুক্ষন পর পর ভিন্ন ভিন্ন সংবাদ ও গুজব ছডাতে থাকে। দুপুরের পরথেকে টেলিভিশনে চট্টগ্রাম কেন্দ্রথেকে ছবিহীন সংবাদ প্রচারিত হয় এবং জিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

বিকালের দিকে কাপ্তাই রোড দিয়ে সেনাবাহিনীর বেশ কিছু জীপ ও পিকাপ গাড়ী চলাচল করতে দেখা যায় এবং সড়ক দিয়ে হাঁটা চলা করতে নিশেধ করা হয়।

সবার মাঝে অজানা আতংক্ষ কাজ করছিল, হোষ্টেল সুপার খবর পাঠিয়েছেন কেউ যাতে ক্যাম্পাসের বাহির না হয়। সন্ধার পর পর্যন্ত দেখা গেল থেমে থেমে সেনাবাহিনীর গাড়ী চলাচল করতে কাপ্তাই সড়কে। ডাইনিং হন ক্যান্টন ছাড়াও আমাদের খাওয়া দাওয়ার দোকান/হোটেল ছিল ক্যাম্পাস্র বাহিরে গেইটের বিপরীতে কাপ্তাই রোড়ের উপর। কেউ কেউ আবার সেই হোটেলের উপর নির্ভরশীল তাই সেখানে খাওয়ার ফাঁকে কি খবরও জানা গেল।

কলেজ গেইটের উত্তর দিকে প্রায় ২০০/২৫০ মিটার দুরে টিলার উপর একটি মাজার আছে, সেই মাজারের খাদেম কাফন বিহীন কার্পেটে পেছানো লাশের যানাজা পড়তে বাধ্য হন। টিলার উপর মাজারের সাথে নামাজ পরার ছোট্ট একটু যায়গা আছে, আমরা সাধারনত হাঁটা চলার সময় মাগরিবের নামাজ আদায় করতাম। আবার পরীক্ষার সময় মাজারে যেতাম দেয়া খাইরাত করতে ফলে খাদেমের সাথে ভাবছিল অনেক।

পরের দিন ৩১শে মে কাপ্তাই সড়কে সেনাবাহিনীর গাড়ী চলাচল নাথাকায় আমাদের যথারীতি হাঁটা চলা শুরু হয়ে গেল। খাদেম কাছথেকে বিস্তারিত জানার আগ্রহ/কৌতুহল আমাদের। মাজারে গিয়ে খাদেমের সাথে কথা হলো। খাদেমকে নিশেধ করা হয়েছিল কাউকে কিছু না বলতে। সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতার ফলে খাদেম বর্ননা করলেন বিস্তারিত। খাদেম অনেক ভয় পেয়েছিলেন। লাশের গোছল ও কাফনের কথা বলেছিলেন, বলেছিলেন আলাদা আলাদা কবর দেওয়ার কথা। সেনারা ধমক দিয়ে বলছিল গোছল কাফনের সময় নাই আর খুলে আলাদা করা যাবে না। যানাজার নিয়ম অনুযায়ী জানতে হয় মহিলা না পুরুষ? এরা বলেছিল একসাথে মুরানো তিনটা আর এক সাথে মুরানো দুইটা লাশ, সবাই মুসলিম ও পুরুষ।
খাদেমের বর্ননা তখন টক অব ক্যাম্পস। হাবলু ছাত্রদলের বলে দ্বাবী করত যদিও তৎকালীন সময়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের অস্থিত্ব ছিল ছাত্র শিবিরের সেজুর বৃত্তি মাত্র। তখন ছাত্র রাজনিতী কেবল মাত্র ক্যাম্পাসে ভিত্তিক ছিল।

ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ ও ছাত্র ইউনিয়ন ছিল স্বক্রিয়। চট্টগ্রামে ছাত্র শিবিরে প্রবাভ থাকায় ছাত্রদল ছিল শিবিরের ছত্রছায়ায়। হাবলু শিক্ষাজীবন শেষ করতে পেরেছিল কি না জানা নাই তবে খালেদা জিয়াকে মা বলে ডাকত ফলে বিএনপি আমলে তার পরিবার সহ নিজেকে আর্থিক ভাবে সমৃদ্ধ করেছিল, জানা যায় এখন বিদেশে পালিয়ে আছে।
জিয়ার কবর নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটানোর দ্বায়ীত্ব তার দল বিএনপি’র। জিয়ার কবর রাঙ্গুনিয়ায় কাপ্তাই সড়কের পাশে থাকলে হয়ত কোনই বিতর্কের সৃষ্টি ো না আবার সজিয়ার কবর সংসদ এলাকায় স্থাপিত না হলে এই বিতর্কের সৃষ্টি হতো না।

জিয়ার কবর সংসদ এলাকায় স্থাপন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত। জিয়ার কবর নিয়ে বিতর্ক জিয়িয়ে রাখা বিএনপি’র রাজনৈতিক হাতিয়ার ফলে তারা এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে চাইবে না কখনও।

News Reporter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *