ঝরে গেলো দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে আরো একটি নক্ষত্র। সকলের প্রিয় অভিনেতা, আমাদের এটিএম শামসুজ্জামান ভাই । শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন, হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন । কিছুদিন আগেই সুস্থ্য হয়ে ফিরেছিলেন বাসায় । অবশেষে শনিবার সকাল ৮টায় রাজধানীর সূত্রাপুরে তার নিজস্ব বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। অত্যন্ত মেধাবী, প্রাণবন্ত, বিনয়ী, সহজ-সরল, সাদামাটা মানুষ ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। ছিলেন একজন আদর্শ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
‘আমার বাবা এবার সত্যি সত্যি না ফেরার দেশে চলে গেছেন’, এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন কোয়েল, তার ছোট মেয়ে কোয়েল আহমেদ খবরটি নিশ্চিত করেছেন । এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর ভুয়া খবর এর আগে বেশ কয়েকবার ছড়িয়ে পড়েছিল।
মৃত্যকালে এ টি এম শামসুজ্জামানের বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর পাঁচ মাস ১০ দিন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তার অক্সিজেন লেভেল কমে গিয়েছিল। হাসপাতালে ডা. আতাউর রহমান খানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি।
তার পূণাঙ্গ নাম আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। তিনি এটিএম শামসুজ্জামান হিসেবেই অধিক পরিচিত। তিনি ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিল আরেক অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে। তারপর জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন।
তার বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মাতা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।
পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে এটিএম শামসুজ্জামানের শুরু ১৯৬১ সালে । জলছবি চলচ্চিত্রের জন্য প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন । ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা , এছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন। প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের নয়নমণি চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনা আসেন তিনি। চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত দায়ী কে ছবিতে । এছাড়াও তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনেতা বিভাগে রেদওয়ান রনি পরিচালিত চোরাবালিতে অভিনয় করেন ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
যাদুর বাঁশি,জলছবি,রামের সুমতি,চুড়িওয়ালা,ম্যাডাম ফুলি,মন বসে না পড়ার টেবিলে চলচ্চিত্রে তাকে কৌতুক চরিত্রে দেখা যায়। আমজাদ হোসেনের নয়নমণি চলচ্চিত্রটি তার অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় । এই ছবির মাধ্যমে তিনি সবার আলোচনায় আসেন। এর আগে নারায়ণ ঘোষ মিতার লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করেন এই অভিনেতা । এছাড়াও খল চরিত্রে তার উল্লেখযোগ্য কিছু চলচ্চিত্র হলো – পদ্মা মেঘনা যমুনা , অশিক্ষিত, গোলাপী এখন ট্রেনে, স্বপ্নের নায়ক।
এ ছাড়া বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনয় করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – অনন্ত প্রেম, দোলনা, অচেনা, মোল্লা বাড়ির বউ, হাজার বছর ধরে, চোরাবালি।
পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে ১৯৬১ সালে কাজ করেন। এছাড়াও খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তদের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন বেশ কিছু ছবির । ২০০৯ সালে শাবনূর-রিয়াজ জুটি নিয়ে প্রথম পরিচালনা করেন এবাদত ছবিটি।
Development by: webnewsdesign.com