
নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ০৫ আগস্ট ২০২২ | প্রিন্ট
শুক্রবার অফিস বন্ধ। ব্যাংক কর্মকর্তা মনজুরুল হক সকালে একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা পড়ছিল। ছোট ভাই জহির রুমের মধ্যে প্রবেশ করল।
জহিরঃ ভাইয়া, বাণিজ্যের উদ্বৃত্ত বলতে আসলে কি বোঝায়?
মনজুরুলঃ সকাল বেলা বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দিয়ে কি করবি?
জহিরঃ একটা বিষয়ে পরিষ্কার হতে চাচ্ছি। তুমি বলো।
মনজুরুলঃ একটি দেশের মোট আমদানির তুলনায় মোট রপ্তানির পরিমাণ যখন বেশি হয়, তখন তাকে উদ্বৃত্ত বাণিজ্য বলে। এক্ষেত্রে অর্থের আন্তঃগমন বেশি হয়ে থাকে অর্থাৎ রপ্তানি বেশি হওয়ার কারণে দেশে বেশি অর্থ প্রবেশ করে।
জহিরঃ যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ বেশি হয়?
মনজুরুলঃ একটি দেশের মোট আমদানির তুলনায় মোট রপ্তানির পরিমাণ যখন কম হয়, তখন তাকে বাণিজ্য ঘাটতি বলে। এক্ষেত্রে অর্থের বহির্গমন বেশি ঘটে থাকে অর্থাৎ আমদানি বেশি হবার কারণে দেশ থেকে বেশি অর্থ বিদেশে চলে যায়।
জহিরঃ বাণিজ্যের উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি কিভাবে হতে পারে?
মনজুরুলঃ ভালো প্রশ্ন করেছিস। বিভিন্ন প্রভাবকের কারণে আমদানি রপ্তানি বৃদ্ধি পায়, কমে যায়। এর ফলে, বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি হতে পারে।
একটি প্রভাবক হতে পারে, ভোক্তার পছন্দ। অনেক ক্রেতা আছে, যারা মূল্য বেশি থাকা সত্ত্বেও জাপানি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী কিনতে পছন্দ করে। এর ফলে কি হচ্ছে, আমদানি বাড়ছে। আবার ভোক্তার পছন্দের কারণেই জাপানের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের রপ্তানি বেড়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ যা অন্য দেশের বাণিজ্য ঘাটতির কারণ, সেটা আবার জাপানের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত। অনেক সময় দেখা যায়, প্রযুক্তিগত সুবিধার জন্য একটি দেশ অন্য দেশ থেকে সফটওয়্যার আমদানি করি। এর ফলে রপ্তানিকারক ও আমদানিকারক দেশের মধ্যে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়।
আরেকটা প্রভাবক হতে পারে, পণ্য প্রবেশে বাধা প্রদান। এটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হতে পারে। অনেক দেশ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সীমা নির্দিষ্ট করে দেয় বা কোন কোন পণ্য আমদানি একেবারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। সাধারণত দেশে উৎপাদিত পণ্যের সাথে যাতে আমদানিকৃত পণ্যের প্রতিযোগিতা না হয়, সেজন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। এছাড়াও অনেক সময় আমদানিকৃত পণ্যের উপর শুল্ক বা কর আরোপ করে পণ্য প্রবেশে বাধা প্রদান করা হয়। যতদূর মনে আছে, জাপানে কৃষিজাত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কঠোর আইন কানুন রয়েছে।
এরপর বাজারজাতকরণের সামর্থের একটা বিষয় রয়েছে। গত দুই থেকে তিন দশক ধরে, এশিয়ার উৎপাদকরা তাদের বাজারজাতকরণ কৌশলে পরিবর্তন করে উন্নতি করেছে। এর ফলে, এশিয়ার অনেক কোম্পানি আমেরিকার কোম্পানির সাথে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করছে।
জহিরঃ মোটামুটি বুঝতে পেরেছি।
মনজুরুলঃ আরেকটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সরকারের নীতি, যা দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। কিছু কিছু দেশের সরকারের নীতি হল, আমদানি উৎসাহিত করা। আবার অনেক দেশের সরকারের নীতি হল, রপ্তানি উৎসাহিত করা। কোন দেশের নীতি হতে পারে শিল্প জাতীয়করণ, আবার কারো হতে পারে রাষ্ট্রীয়করণ।
জহিরঃ বুঝতে পারছি। আর ব্যাখ্যা দেয়া লাগবেনা।
মনজুরুলঃ ঠিক আছে। তোর রুমে যা। যাবার সময় এসি সেটা চালু করে দিয়ে যাস।
লেখকঃ রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
Posted ২:১৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ আগস্ট ২০২২
dhakanewsexpress.com | Masud Rana