
নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২ | প্রিন্ট
ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট
-ফাইল ছবি
ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, যিনি আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরীর অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন যুবলীগের নেতা হিসেবে । কিন্তু ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় আটকা পড়েন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট । তার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো বাণিজ্যসহ চাঁদাবাজির নানা রকম অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করে । সেখান থেকে এখন পর্যন্ত কারাগারেই আছেন । শারীরিকভাবে অসুস্থ এই নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের গ্রেপ্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া । অনেকে মনে করতো, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট হলো আওয়ামী লীগের দুর্দিনের সাথী। আওয়ামী লীগের কঠিন সময় গুলোতে সম্রাট যেভাবে দলের পাশে দাঁড়িয়েছে, লড়াই করেছে সেটি বিরল ঘটনা এবং একজন ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতা হিসেবে দলে তার সুনাম রয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, যত ত্যাগই স্বীকার করুক না কেন দলের পরিচয় ব্যবহার করে যদি চাঁদাবাজি করা যায় তাহলে শাস্তি পেতেই হবে। কিন্তু এ ধরনের মতবাদের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। বরং দলের অগণিত নেতাকর্মী মনে করেন যে, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট দলের জন্য প্রয়োজন। বিশেষ করে সামনে নির্বাচন এবং এই নির্বাচনের আগে আন্দোলনের শঙ্কা রয়েছে। আন্দোলনে ঢাকা একটি বড় ফ্যাক্টর।
ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে যত অভিযোগই করা হোক না কেন তিনি যে একজন ভালো সংগঠক এটি নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগ এক ধরনের সংকটে পড়েছে। কারণ, ঢাকায় একটা বড় ধরনের কর্মসূচি করা, লোক জোগাড় করা বা বিভিন্ন বিরোধীদের চাপ মোকাবেলার জন্য যে ধরনের শক্তি এবং সাংগঠনিক দক্ষতা দরকার তার শূন্যতা অনুভূত হয় প্রায়ই। একারণেই অনেকেই মনে করছিলেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। আর এখন যে অবস্থায় তাতে ধারণা করা হচ্ছে, সম্রাট রাজনীতির মাঠে আবার ফিরেই আসছেন।
চারটি মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন, আগামীকাল বুধবার দুর্নীতি দমনের মামলাতেও জামিন চাওয়া হবে এবং সেই মামলাতেও তিনি জামিন পাবেন বলে আশা করছে সম্রাটের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এর আগে, সম্রাটকে অর্থ মামলা, অস্ত্র মামলা এবং মাদক মামলা থেকে জামিন দেয়া হয়েছে। ফলে শুধু দুর্নীতির মামলায় যদি তিনি জামিন পান তাহলেই সম্রাটদের মুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকে না।
প্রশ্ন উঠেছে, সম্রাটকে কি আইনি লড়াইয়ে মুক্তি দিচ্ছে না এই মুক্তির পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে? সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা যেমন চোখে পড়েছে ঠিক তেমনিভাবে বিভিন্ন এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ডের সন্ত্রাসীদের দাপট বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শাজাহানপুরের ডাবল মার্ডারের পর বুঝা গেছে যে, আওয়ামী লীগের ভিতরেও সন্ত্রাসীদের অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু সম্রাট যখন পূর্ণ ক্ষমতায় ছিল তখন এ ধরনের ঘটনাগুলো অকল্পনীয় ছিল। কারণ, সম্রাটের নিয়ন্ত্রণেই ছিল কমলাপুর, মতিঝিল এলাকা। শুধু তাই নয়, পুরো ঢাকা শহরে তার একটা নিয়ন্ত্রণ ছিল। আর এই কারণেই অনেকে মনে করছেন যে, সম্রাটকে হয়তো ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং অপরাধের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতায় নীতি গ্রহণ করে আছে। কাজেই, কেউ যদি অপকর্ম করে তাহলে তাকে আবার দলে ফিরিয়ে নিয়ে আসাটা ভালো লক্ষণ হবেনা। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছে যে, শেষ পর্যন্ত সম্রাটকে হয়তো আবার ফিরিয়ে আনা হবে। কারণ সামনে নির্বাচন, আন্দোলনের চেষ্টা ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে সম্রাটের আওয়ামী লীগে ফিরে আসাটাই অনেক প্রত্যাশা করছেন। জামিনের মাধ্যমে কি তাহলে ফিরে আসছেন সম্রাট? এই প্রশ্নই এখন রাজনৈতিক অঙ্গন সহ বিভিন্ন মহলে ।
Posted ১২:০৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২
dhakanewsexpress.com | Masud Rana