পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের পানিমাছ পুকুরী। মুক্তিযোদ্ধার সাইন বোর্ড ব্যবহার করে আবাসন প্রকল্পের খাস জমি দখল করে গোপনে তোলা হচ্ছে ফ্ল্যাট। এক ব্যক্তি এই ফ্ল্যাট তুলছেন। প্রভাবশালী মুক্তিযুদ্ধার ছেলে হওয়ায়
ক্ষমতার অপব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছে নির্মাণ কাজ ওই আশ্রয়নের রফিকুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধার ছেলে হওয়ায় স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না। চারপাশে উঁচু বেড়া দিয়ে ভেতরে জোরেশোরে চলছে ফ্ল্যাটের নির্মাণ কাজ। প্রশাসন নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নোটিশ করলেও মানছে না ওই ব্যক্তি।
এসময় গণমাধ্যমকর্মীরা ছবি নিতে গেলে মুক্তিযোদ্ধা গমির উদ্দিনের সাথে একপর্যায়ে কথা কাটাকাটি হয়।
পানিমাছ পুকুরী আশ্রয়নের পূর্ব পাড়ের প্রথম বাড়িই ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধার গমির উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলামের। রফিকুল আশ্রয়নের বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলো ঘেঁষেই তুলছেন ফ্ল্যাট বাড়ি। দৈর্ঘ্যে ৩৬ ফুট এবং প্রস্থে ৩২ ফুট। কাজও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কেবল ছাদ ঢালাই বাকি।বাইরে থেকে কেউ যেন বুঝতে না পারে সেজন্য বাঁশের চাটাই দিয়ে উঁচু করে বেড়া দেয়া হয়েছে। ভেতরে চলছে মিস্ত্রিদের কর্মযজ্ঞ। চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধার ছেলের রফিকুলের লাঠিয়াল বাহিনী ও তার পরিবারের লোকজন। বাইরের কেউ আসছে কিনা নজর রাখাই তাদের কাজ। একটু উঁচুতে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় জায়গাটি আশ্রয়নের খাস জমির মধ্যেই রয়েছে। প্রভাবশালী হওয়ায় রফিকুলের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা সরাসরি কেউ কথা বলতে রাজি হননি। জানা যায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই কাজে হাত লাগিয়েছেন ওই ব্যক্তি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আশ্রয়নের এক বাসিন্দা বলেন, রফিকুল কোটিপতি মানুষ। তারপরও তাকে আশ্রয়নে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঘর পাওয়ার পর এখন কৌশলে খাস জমি দখল করে ফ্ল্যাট তুলছে। এদিকে আরো অনেকে জানান। মুক্তিযোদ্ধা সাইনবোর্ড ব্যবহার করে রফিকুল ইতিমধ্যেই। অনেক কিছু অবৈধভাবে অর্জন করে বাবা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না
এক বাসিন্দা বলেন, আশ্রয়নের জমি মাপযোগ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা জানি ওই জমিটুকু আশ্রয়নের ভেতরের খাস জমি। কিন্তু এখন রফিকুল হঠাৎ জমিটি তার কেনা দাবি করে ফ্ল্যাট তুলছে। প্রশাসন বিষয়টি জানে। প্রশাসন কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও ভেতরে ভেতরে কাজ চলছে।রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কেনা জমিতেই আমি ফ্ল্যাট তুলছি। এটি খাস জমি নয়। আশ্রয়নের খাস জমি সংলগ্ন আমি ১৫ শতক জমি কিনেছি। সেই জমিতেই ফ্ল্যাট তুলছি। সদর এসিল্যান্ড অফিস থেকে আমাকে নোটিশ করেছে। নোটিশ পেয়ে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। এছাড়া জমিটির সব কাগজপত্র আমি এসিল্যান্ড অফিসে জমা দিয়েছি।
হাফিজাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মুছা কলিমুল্লা বলেন, তারা গোপনে কাজ শুরু করেছে। আমরা বিষয়টি জানতাম না। যখন অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে তখন আমরা জেনেছি। প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জমি যেহেতু সরকারের তাই বিষয়টি প্রশাসনই দেখবে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, খাস জমির উপর ওই ফ্ল্যাটটি নির্মিত হচ্ছে। সেটি উচ্ছেদের জন্য অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। নির্দেশনা পেলেই সেটি উচ্ছেদ করা হবে।
এদিকে সমাজের বিত্তবানরা বলেন অসহায় গরীব মানুষের ঘরবাড়ি টাকার বিনিময় যারা কোটিপতিদের কে দিচ্ছে, এ বিষয়ে তো কোন তদন্ত করা হয়না। যে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জমি জায়গা ফ্লাট বাড়ি দেয়ার সামর্থ্য আছে এরা কিভাবে আবাসন প্রকল্পের জায়গা দখল করে এবং ঘর পায় এটাকি ভাববার বিষয় নয়। গুচ্ছগ্রাম তালিকা করার সময় তারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমান এসব দেখেন না।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই ব্যক্তিকে দু’একদিনের মধ্যেই আরেকটি নোটিশ করবো। সে নিজে থেকে সরে না গেলে আমরা প্রশাসনিকভাবে আইনী প্রক্রিয়ায় তাকে উচ্ছেদ করবো।
Development by: webnewsdesign.com