
মুক্তিযুদ্ধ ৭১ নিউজ
মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন:
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি যে ভাল নয় তা গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার, মসজিদ, মন্দিরসহ দেশের সব স্থানে তাকালেই অনুমান করা সম্ভব।
দেশের সবকিছু এখন আওয়ামী লীগের দখলে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সরকারী অফিস-আদালত, প্রশাসন ও যেন আওয়ামী লীগ। বর্তমান সরকার স্থানীয় সরকারকে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দিয়ে দেশের কতটা যে ক্ষতি করেছে তা বর্ননাতীত। ক্ষমতাসীনরা বার-বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কারণে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে।
দেশের সর্বত্র চলছে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে লুটপাটের রাজত্ব। এসব দুর্নীতিবাজরা প্রশাসনের সাথে একত্রিত হয়ে দেশের সর্বত্র মগের মুল্লুক সৃষ্টি করে যেমন ইচ্ছে তেমন করে যাচ্ছে। এতো দিনে যত দুর্নীতিবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও অনিয়মকারীরা ধরা পড়েছে তা হয়তো আওয়ামী লীগ, নয়তো এ দলের কোন অঙ্গ সংগঠনের। এসব ব্যক্তিরা আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেই শাসক দল বলছে, ওরা অনুপ্রবেশকারী এবং পরদিন সংবাদ মাধ্যমে প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে তাদেরকে বহিষ্কারের ঘোষনা করছে। দেশবাসী শাসক দলের নেতৃবৃন্দের কাছে জানতে চাচ্ছেন, এসব ব্যক্তিদের অনুপ্রবেশ করালো কে বা কারা ?
যদি অনুপ্রবেশকারীরা খারাপই হবে, তবে যারা অনুপ্রবেশ করালো তারা কেন খারাপ হবে না? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডকে বলবো, যারা এই সব বিতর্কিত ও খারাপ ব্যক্তিদেরকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিলো তাদেরকে চিহ্নিত করে দল হতে বহিষ্কার এবং কঠোর বিচারের ব্যবস্থা করুন। এখন আর ত্যাগের, সমতার এবং দলের প্রতি বিশ্বস্ততার কোন মূল্য নেই। টাকা দিলেই দলীয় পদ যেমন পাওয়া যায়, তেমনি যে কোন সম্মানজনক বা লাভজনক পদের অধিকারী হওয়া যায়। তাতে সে যে দলের লোকই হোক, কোন সমস্যা নেই।
বিএনপি টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রি করার জন্যই এ’দলটি দুর্বল হতে-হতে দুর্বলতম হয়ে পড়েছে। এখন আর আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী ও সৎ নেতাদের অংশগ্রহন লক্ষ্য করা যায় না এবং এ কারণেই তাদের আন্দোলন-সংগ্রামে সফলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে ভুল করছে তার মাশুল তাদেরকে দিতে হবে এবং তা আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। একজন ডাক্তার ভুল করলে একজন রুগী মারা যায়, আর কোন রাজনৈতিক দল ভুল করলে সে রাজনৈতিক দলের পতন হয়। তাই এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, ভারতের রাজনীতির দিকে তাকাতে, ভারতের কংগ্রেস আজ বিরোধী দলেও নেই!
দেশের রাজনীতে পঁচন ধরেছে, হয়তো পঁচন গ্যাংরিনে পরিনত হয়ে মৃত্যু ঘটাবে। সবকিছু দলীয়- করনের জন্য দেশের সার্বিক অবস্থা অসয়নীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশের সাধারণ মানুষ এ সরকার, দলীয় নেতা-নেত্রীদের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অত্যাচার-নির্যাতনে চরমভাবে অতিষ্ঠ হলেও কোন প্রতিবাদ করছেন না, তবে তাঁদের নিরাবতা বেশী ক্ষতিকর এ সরকারের জন্য। জোর-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন, কারসাজি আর রাতের আধারে গোপন চুক্তি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বেশী দিন ধরে রাখা যায় না। জনসাধরণের মতামত এবং তাঁদের প্রতি যারা বিশ্বাস রাখতে পারে না তারা বেকুবের স্বর্গে বসবাস করছে।
পাকিস্তান সরকার তাদের কার্যকলাপের জন্য দেশবাসীর প্রতি আস্থা রাখতে পারেনি বলেই তারা জোর-জুলুম করে ক্ষমতা আকড়ে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু দেশবাসী তাদেরকে সে সুযোগ দেয়নি। তাদের পরিনতির কথা শাসকগোষ্ঠীর মনে রাখা উচিৎ। একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে,লোভে পাপ এবং পাপে মৃত্যু, তাইতো পুনরায় বলতে হচ্ছে, সাধু সাবধান!
বর্তমান সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, এমপি, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, মেয়র, চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বেতন ১২৩% ভাগ বৃদ্ধি, উৎসব বোনাস, বৈশাখী বোনাস, স্বল্প সুদে বাড়ী, করবিহীন গাড়ী ক্রয়, বাসার কাজের জন্য এবং গাড়ী ড্রাইভারদের বেতন বরাদ্দ করেই ক্ষান্ত হয়নি, কোন কোন বিশেষ আমলার জন্য ৭৫,০০০/- টাকা মূল্যের একটি মোবাইল ফোন সেট বরাদ্দ করেছে।
এবং এর ফ্লাক্সির টাকা ও দিতে হবে দেশবাসীকে। এতো কিছু করার পরও তাদের ঘুষ ও দুর্নীতি কমেনি, বরং বৃদ্ধি, পেয়েছে। সরকারী কর্মচারীদের সেবার মান শূন্যের কোঠায়। তারা ইচ্ছে করলে অফিসে আসে, আর ইচ্ছে না করলে আসে না। এখন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা হয়েছে দেশের মালিক, আর দেশবাসী হয়েছে দেশের প্রজা। দেশবাসীর প্রশ্ন, যদি দুর্নীতি ও ঘুষ না-ই কমবে তা হলে এতো বেশী পরিমানে বেতন ভাতা বৃদ্ধি করে জনগণের ওপর করের বোঝা বৃদ্ধি করা হলো কেন ? বর্তমান সরকার কি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কথায়ই চলছে, তা দেশবাসী জানতে আগ্রহী। অবশ্যই এক দিন এর জবাব দিতে হবে এবং সেদিন আর বেশী দূরে নয়।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ও আওয়ামী লীগের প্রাধান্য শতভাগ। তাদের নির্দেশ ছাড়া কোথায় ও কেউ নিয়োগ পায় না। কলেজগুলোতে দলীয় এমপি পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং অন্যান্য পদেও আওয়ামী লীগের ব্যক্তিরা নিয়োগ পেয়ে থাকে। তাদের ইচ্ছে মতো শিক্ষকসহ অন্যান্য পদে নিয়োগ দিয়ে থাকে। দলীয় নিয়োগের কারণে কোন অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ না পেয়ে অযোগ্যরা নিয়োগ পেয়ে আসছে। এসব শিক্ষকরা লেখা পড়ায় কাঁচা, তেমনি অন্যান্য দিক দিয়েও পিছিয়ে পড়া। এ’সব শিক্ষক নিয়োগের ফলে ভবিষ্যতে জাতি মেধাশুন্য জাতি হিসেবে পরিনত হবে।
দলীয় চিন্তায় ব্যাংক-বীমার অনুমতি দেয়ার ফলে ব্যাংক ও বীমার ভবিষ্যত নিয়ে দেশবাসী চিন্তিত। একটা ছোট দেশে এতো সংখ্যক ব্যাংকের অনুমতি দেয়াটা মোটেই যুক্তিসংগত হয়নি। এর মাশুল আগামী দিনগুলোতে এ জাতিকে বহন করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীসহ অন্যান্যদের বেতন, ভাতার সাথে সংশ্লিষ্ট ভাতাদি বৃদ্ধির ফলে জনগণের ওপর করের বোঝা এতোটা বৃদ্ধি করা হয়েছে যা দেশবাসী দিতে গিয়ে ফতুর হয়ে যাচ্ছে। বেতন-ভাতার জন্য সরকার বিভিন্ন ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহন করায় বিনিয়োগ খাতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সরকারের এক-একটি ভুলের জন্য দেশবাসীর অপুরনীয় ক্ষতিসহ দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বিভিন্ন ব্যবসায়িরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর ফেরৎ দিচ্ছে না। এ লোনীদের পেছনেও এক শ্রেনীর আওয়ামী লীগ নেতারা জড়িত। বিভিন্ন ব্যাংকে যাদেরকে দলীয়ভাবে পরিচালক করা হয়েছে তারাই ওই সব লোনের সাথে জড়িত। তারা বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ওসব ব্যক্তিদের লোনের ব্যাপারে তদবির করেছে।
কৃষক জাতির মেরুদন্ড এবং যারা রৌদ্রে পুড়ে,বৃষ্টিতে ভিজে দেশবাসীর আহারের ব্যবস্থা করেন তাঁদের ব্যাপারে কোন প্রনোদনা নেই ও কোন ছাড় ও নেই। আর যারা ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, অর্থ বিদেশে পাঁচার করে দেশের সমুহ ক্ষতিসাধন করছে তাদের ব্যাপারে প্রনোদনা দেয়া হয়। তাদের লোন সুদাসলে মওকুফ করা হয় কিন্তু কৃষকের ব্যাপারে কোন ছাড় নেই। কৃষক ২ হাজার বা ৫ হাজার টাকার লোনের জন্য জেলে যায়, কোমরে দড়ি দিয়ে পুলিশ বেধে পথে ঘাটে হাটায়। অথচ কোন কোন ব্যক্তির হাজার হাজার টাকা ঋণ খেলাপী হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না। রাষ্ট্রয়াত্ব শিল্প-কারখানা পানির দরে বিক্রি করে নব্য শিল্পপতি ও ধনী সৃষ্টি করা হলো। এক ব্যাংক হতে লোন নিয়ে অন্য ব্যাংক ক্রয় করলো এবং তারাই সমাজের মধ্যমনি। শিক্ষা ব্যবস্থাকে পন্য করা হলো। বেসরকারী স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে সেখানে ধনীর সন্তানদের ভিন্ন মাত্রায় শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে বেসরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে প্রধান্য দেয়া হচ্ছে। চাকুরীজীবিদের বয়স সীমা বৃদ্ধি করে নতুন শিক্ষিত ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়োগে বাধার সৃষ্টি করা হলো, অথচ এসব শিক্ষার্থীদের চাকুরীর বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে!!!
আজ সর্বত্র আমলাদের প্রধান্য এবং তারা যা-যা বলছে বা দাবী করছে সরকার প্রধান তাই মেনে নিচ্ছেন। এ সরকারের আগের টার্মে একই মন্ত্রনালয়ে ৫জন আমলার প্রধান্য এবং তাদের ব্যবস্থাপনায় বেতন-ভাতা ১২৩% বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে দেশবাসীর ওপর অত্যাধিক করের বোঝা করে চাপিয়ে দেয়া হলো। জাতীয় সংসদে কৃষক-শ্রমিকের কোন প্রতিনিধি না থাকায় তাদের পক্ষে কোন বিল যেমন ওঠছেনা, তেমনি তাঁদের পক্ষে তেমন কোন আইনও পাশ হচ্ছে না।
যে যত দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর এবং অসৎ ব্যক্তি সে ততো সম্মানিত। দেশ স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান পাকিস্তান হতে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে তাঁর চার পাশের চোরদের আচরন দেখে তিনি অতি ক্ষোভ এবং দুঃখের সাথে বলেছিলেন, “সবাই পায় স্বনের্র খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি। পাকিস্তানিরা সব নিয়ে গেছে, এ চোরগুলো নিয়ে গেলে আমি বাঁচতাম।” তিনি ওইসব চোরদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করেছিলেন কিন্তু বড়ই দুর্ভাগ্য তাঁকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মর্মান্তিকভাবে হত্যা করে বাঙালি জাতির লালায়িত স্বপ্ন চিরতরে ধুলিস্যাত করে দেয়া হয়। তিনি যে ২য় বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন তা বাস্তবায়িত হলে দেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারতেন এবং দেশে অর্থনৈতিক মুক্তি আসত। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি বলেছিলেন, “অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন”। কায়েমী স¦ার্থবাদীরা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দিলো না।
সব কথার শেষ কথা, বাঙ্গালী জাতি যে আশা বা প্রত্যাশা নিয়ে জাতির জনকের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তা বাস্তবায়িত না হয়ে হয়েছে উল্টো। পাকিস্তান আমলে ছিল ২২ পরিবার। আর আজ দেশে সৃষ্টি হয়েছে ২২ লাখ পরিবার। তখন আমালাদের যে প্রাধান্য ছিল আজ তা হয়েছে শতগুনে বেশী। সরকার বার বার বাংলাদেশর সংবিধান লংঘন করে যাচ্ছে…., অবশ্যই এ জবাব ও তাদের দিতে হবে।