
মোঃ মারুফুর রহমান খানঃ | বুধবার, ৩১ আগস্ট ২০২২ | প্রিন্ট
আমরা যারা ৯০ র দশকের বেড়ে উঠা প্রজন্ম, তারা নিজেদের অনেক দিক থেকেই ভাগ্যবান দাবি করতে পারি, এজন্য যে, আমরা এমন একটি প্রজন্ম যারা সাদাকালো র জগৎ দেখেছি এবং সাথে সাথে ট্রান্সফরমেশন এর মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছি।
সহজ কথা দিয়ে শুরু করি। আমাদের সময় ছিল সিংগেল ডিজিট টিভি চ্যানেলের যুগ, মানে বিটিভি, তাও আবার সাদাকালো। টিভি সবার বাসায় ছিলও না, আমরা পাশের বাসার টিভি দেখতে যেতাম। যখন ম্যাক গাইভার, দি এ টিম দেখতে বসতাম তখন টিভি ঝির ঝির করলে একজন চলে যেতাম বাশ ঘুরাতে, মানের বাশের আগায় এন্টেনা লাগানো থাকতো, আর মনে মনে দোয়া পড়তাম, বাইরের জন চিল্লাইয়া বলতো, হইছে? ভিতরের জনেরাও সমস্বরে রিপ্লাই দিতো, হয় নাই, হইছে, আরে ্ হইছিলো, আবার আগের জায়গায় নে। আহা, সেই টাই এক অনুভুতি, যা তখন বুঝি নাই, এখন বুঝি।
তখন আমরা দল বেধে সিনেমা হলে যেতাম, সাদা কালো র যুগ থেকে আমরা আংশিক রংগিনে প্রবেশ করি। ফ্রন্ট স্টল, রিয়ার স্টল, ব্যালকনি ইত্যাদি নাম গুলো র সাথে পরিচিত হই তখন থেকে। ওহ , আজকের যারা সিনেপ্লেক্স প্রজন্ম, তাদের কাছে এই নাম গুলি হিব্রু। সোহেল রানার লড়াকু র টিকিট যখন অনেক কস্টে টিকিট জোগাড় করে দেখি সিট ফ্রন্ট স্টলের, মানে একেবারের সামনে সিট, যা থেকে পর্দার দুরুত্ব প্রায় এক হাত বা একটু দূরে।
আর ছিলো পোস্ট অফিস, চিঠি নিয়ে আসতো পোস্টম্যান, শুধু চিঠি ই না। বেশ কিছু কিশোর প্ত্রিকা এনরোল করেছিলাম, যা আনার একমাত্র মাধ্যম ছিলো পোস্ট অফিস।
আমার কৈশোরে মোবাইল ছিলো না, আমাদের বাসায় ও কোন ল্যান্ড ফোন ছিলো না। যাদের বাসায় ছিলো তারা সেটে তালা দিয়ে রাখতো।
আমারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দেখেছি, হলের ছাত্রদের লাইন দিয়ে কয়েন ফেলে বিশালাকার ফোন বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। পরবর্তীতে, আসলো এসটিডি বুথ। এক সময় আমরা প্রবেশ করলাম মোবাইলের দুনিয়ায়। মটোরোলার সেই সিডিএমএ র ফোন যা ছিলো সাধারনের স্বপ্নের ব্যাপার। পরবর্তিতে আমাদের হাতে আসলো নোকিয়া যা কিনা মাস পিপল কে কানেক্ট করে ফেলেছিল। আর মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছিলো মোবাইল ফোন রিচার্জ এর দোকান।
আর হ্যা, আমাদের সময় জনপ্রিয় ছিলো পাবলিক লাইব্রেরি। বিকেলে আমরা নানা বই পড়তে যেতাম।
আরেকটি জিনিস ছিলো, তা হলো ক্যামেরা। ক্যামেরার রিল। মনে পড়ে ৩৬ টা ছবি যাতে উঠে সেজন্য বিশেষ কায়দা করে রিল লাগাতে হতো, যদি না পারতাম তাইলে বন্ধুদের বকা একটাও মাটিতে পড়তো না।
আর ছিলো ব্যাংকিং। আব্বার সাথে একবার ব্যাঙ্কে গেলাম চেক দিয়ে টাকা তুলতে। একজন সোনালী রং এর একটি কয়েন দিলো, আব্বা আমাকে বসিয়ে বাইরে চলে গেলেন। আসলে ওটা ছিল সিরিয়াল নং। আমার মনে আছে, পাক্কা দুই ঘন্টা বসে ছিলাম আমি। আর আমি কয়েনটি এমন ভাবে ধরে রেখেছিলাম যে, ঐ টাই টাকার চাবি।
এতক্ষন যে কথা গুলি বল্লাম, আমাদের বর্তমান প্রজন্ম ভাবছে যে, এই গুলি গাল গল্প। টিভি দেখতে বাশ ঘুরাইতে হবে কেনো? যেখানে ডিশ, ওয়াই ফাই কানেকশন, হালের আকাশ, ইউ টিউব এতগুলি অপশন বিদ্যমান।
কল করতে হলে কারো বাসায় যেতে হবে কেনো? যেখানে মোবাইল আছে হাতের মুঠোয়।
পোস্ট অফিস!!! সে আবার কি? চিঠি লিখবো কেন? যেখানে আছে ই-মেইল, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, লিঙ্কড ইন আরো কত কি।
বই পড়তে পাব্লিক লাইব্রেরীতে যাবো কেন? যেখানে গুগল সার্চে হাজারো বই এর পিডিএফ এর ভান্ডার।
সেই নোকিয়াও আজকে ইতিহাস, কারন সে নিজেকে পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত করে নাই। ক্যামেরা, ফিল্ম, ফুজি, কোডাক আজকে ইতিহাস। ক্যামেরা চলে গিয়েছে মোবাইলে।
আধুনিক ডেস্কটপ/ল্যাপটপ এর কাজও এখন হয় মোবাইল ফোনে। ই-মেইল থেকে শুরু করে ডকুমেন্ট লেখার সব কাজই এখন মুঠোফোনে ই করি।
অফিসের সাথে বিভিন্ন প্রজেক্টের গ্রুপের আপডেট/ মিটিং মাইন্যুঈটস ও পাই হোয়াটাসাপ গ্রুপে।
আর ব্যাংকিং। সোনালী কয়েনের দিন তো আর নেই। ম্যানুয়াল লেজার এর দিন নেই। এটিএম আসলো। আর এখন??? মুঠোফোনেই সেরে ফেলি তা। ফান্ড ট্র্যান্সফার থেকে শুরু করে মোবাইল রি চার্জ, উইটিলিটি বিল প্রদান, সবই তো হচ্ছে মোবাইল অ্যাপ্সে। লেটেস্ট টেকনোলজি হিসেবে আসছে কিউ আরে কোডে ট্রান্সজেকশন। চেক বই দিয়ে আমি কবে টাকা তুলেছি তা ভুলে গেছি।
টাকা জমা দেওয়ার জন্যও আছে রিয়েল টাইম সিডিএম (ক্যাশ ডিপোজিট মেশিন), যাতে কিনা গ্রাহকের শাখায় ও আসতে হচ্ছে না। এবং নেই কোন টাইম এর সীমাবদ্ধতা।
অফিসের অ্যাভন্তরীন কার্যাদি সম্পন্ন করতেও এখন চলে এসেছে ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যা ডিএমএস নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে স্মার্ট ওয়ার্ক ফ্লো দিয়ে সহজেই প্রথাগত নথি চালাচালি না করে ডেস্কে ফাইলের পাহাড় না সাজিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পন্ন করা সম্ভব।
আমরা যারা এই সব টেকনোলজি ব্যবহারে ভীত হবো তারা এক সময় রেসে থাকতে পারবো না। অবস্থা হবে, কোডাক, ফুজি, পোস্ট অফিস, নোকিয়া , সিডিএম এ মোবাইল ফোনের মতো।
লেখক -ইভিপি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক।
Posted ৯:১০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩১ আগস্ট ২০২২
dhakanewsexpress.com | Masud Rana