দিনটি ছিল শুক্রবার। সারা সপ্তাহের ক্লান্তিকে মুছে দিয়ে আবার নতুন উদ্যেমে কাজে মনোনিবেশ করার জন্য একটু বিশ্রাম নেয়ার দিন। সবার জন্য বিশ্রাম প্রয়োজন। কি কে শোনে কার কথা। পরিবার যে ডাকছে তোমায়। চলঘুরে আসি প্রকৃতির নিবীড় ছোয়ায়। সেই বাধ ভাঙ্গা খুশির যোয়ারে ভাসতে ও সারা বছরের ক্লান্তিকে মুছে দিতে সকল আলোকিত শিশু চিকিৎসা ভিত্তিক স্কুলের বিশেষ শিশুরা তাদের অভিভাবকসহ মিলিত হয়েছিল বার্ষিক বনভোজন ও আনন্দ ভ্রমনে।
হোক না একটু কষ্ট, সন্তানের আনন্দই যেন প্রথম অগ্রাধিকার। তাই সপ্তাহের বিশ্রামের দিনেও বিশেষ শিশুর অভিভাবকগণ মিলিত হয়েছে তাদের সন্তানদের সাথে। তারা যে বিশেষ শিশু। কেউ কথা বলতে পারে না, কেউ নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না, কেউ পরিবেশের সাথে নিজেদের খাপখাওয়াতে পারেনা, কেউ আবার আনন্দ প্রকাশ করতে পারেনা, কিন্তু তাতে কি? আমরাও শিখতে চাই। যদি আমাদের মতকরে পরিবেশ দাও তবে আমরাও শিখতে পারি, দেখাতে পারি, মিশতে পারি। কে বলেছে আমরা প্রতিবন্ধী।
আনন্দ উল্লাসে একসাথে থাকি সারা বেলা। করি হইহূল্লর, গাণ-নাচ, খেলাধূলা, খানাপিনা ও আনন্দ ভাগাভাগি। আলোকিত শিশু চিকিৎসা ভিত্তিক স্কুল অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি আয়োজন করে থাকে বিশেষ আউটিং প্রোগ্রাম। এর মধ্যে একটি বড় প্রোগ্রাম হলো বার্ষিক বনভোজন। এই বার্ষিক বনভোজন শিশুদেরকে সামাজিকরণ শিখাবে, মনের ভাব বিনিময় করতে শেখাবে, খেলতে শিখাবে, একসাথে খেতে শিখাবে, আনন্দ প্রকাশ করতে ও বিনিময় করতে শেখাবে, সেই সাথে কাজে আগ্রহ যোগাবে।
আলোকিত শিশুদের জীবনের প্রতিটি কাজ অনেক যুদ্ধ করে শিখতে হয় এদের ব্রেনের বিকাশ জনিত সমস্যার কারনে। সমাজের আর দশজন শিশুর মত এরা সহজে সব কিছু পরিবেশ থেকে শিখতে পারে না। এদেরকে শিখিয়ে দিতে হয়। তাই বিশেষ স্কুল ও বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের সমাজ এখনও বিশেষ স্কুল বা চিকিৎসা ভিত্তিক স্কুলকে নিজের সন্তানের জন্য মেনে নিতে পারে না। এযে বড় কষ্টকর বিষয়।
তাছাড়া সমাজে অভিভাবকেরা বলতেও লজ্জাবোধ করে যে আমার শিশু বিশেষ স্কুলে পড়ে। এই ধারনার বাইরে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। বিশেষ শিশুর জন্য বিশেষ পদ্ধতিই প্রয়োজন। তা না হলে শুধু সময়েরই অপচয় হবে মাত্র। সময় চলে যাবে, শিশুর বয়স বেড়ে যাবে, সমস্যাগুলো আরো পাকা পোক্ত হবে। যে বিকাশ প্রাতঃ শিশু বিকাশে সম্ভব তা বয়স বারার সাথে সাথে ধীর গতি হতে থাকে। এখনও বিশেষ শিশুর অভিভাবকগন তাদের রেগুলার শিশুদের চেয়ে পিছিয়ে পরা শিশুদের কম গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আলোকিত শিশুদের নিয়ে এরকম বৃহৎ কার্যক্রম আমাদের সমাজে বিশেষ শিশুদের প্রতি আরো সচেতনতা বাড়াবে।
যে সকল অভিভাবক সন্তানদের নিয়ে বাহিরে কোন অনুষ্ঠানে যেতে লজ্জা বা সমস্যা বোধ করেন তাদের সচেতনতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। আলোকিত শিশুদের ভাবনা আমরাও দেশের এবং দশের কল্যানে নিজেদের কাজে লাগতে চাই স্বাধীন ভাবে। আমরা আলোকিত শিশুদের সমাজের সাথে একাত্ব হতে সহযোগীতা করবো এটাই হোক আমাদের কাম্য ।
Development by: webnewsdesign.com